



প্রথমে বন্দনা করি হুতোম পেঁচারে,
নকশার আদি গুরু প্রণমি তাহারে।
অতঃপর বন্দনা করি গুরু বাচস্পতি,
আনতারা ফুসকুলিয়ে ওঠে তাঁর প্রতি।
এরপর বন্দনা করি হিজিবিজিবিজে,
অনর্গল হাসির বাষ্পে শরীর যায় ভিজে।
তারপর বন্দি আমি বাবু শিব্রাম,
প্রাণে যিনি এনে দেন Pun এর আরাম।
ঢোল গোবিন্দ নাম নেন মুখুজ্যেমশায়,
তাঁহারও চরণতলে রেখেছি আমায়।
যদ্যপি এখন গুরুর ভরসা গালাগাল,
তদ্যপি আমার গুরু নগর কবিয়াল।
সবশেষে বন্দি আমি কবি পুরন্দরে,
ফ্যাৎ ফ্যাৎ, সাঁই সাঁই, কবি যান উড়ে।
এ পুঁথির কিম্ভূত কথা বারুণী সমান,
অল্প খেলে দোষ নাই, বুঝে শুনে খান।।
আরও অনেকেই আছেন যারা আমার কারুবাসনাকে জাগিয়ে রাখেন। বাংলা, ইংরাজী মিলিয়ে তালিকা দীর্ঘ - ত্রৈলোক্যনাথ, পরশুরাম, লীলা মজুমদার, সত্যজিৎ রায়, প্রেমেন্দ্র মিত্র, বিভূতিভূষণ, দেবেশ রায়, অসীম রায়, বিক্রমন নায়ার, জীবনানন্দ, আল মাহমুদ, শঙ্খ ঘোষ, Jack London, George Orwell, Lewis Carroll, Dick King Smith, Agatha Christi, Martin Gardner, Ian Stewart, Alex Bellos, Steven Strogatz, George Gamow, Richard Feynman, Primo Levi, Bill Bryson, John Gribbin, Jared Diamond, Yuval Noah Harari এবং আরও অনেকে। তালিকা দিন দিন দীর্ঘতর হচ্ছে, ইংরাজী ভাষায় তো বটেই এমন কি বাংলাতেও পরিমল ভট্টাচার্য, নলীনী বেরারা নতুন করে ভাবাচ্ছেন। তবু আর একজন গুরুর কথা বিশেষ করে না উল্লেখ করলে নয় যদিও তিনি লিখেছেন ইংরাজী ভাষায় আর কিম্ভূতের পুঁথির ভাষা বাংলা। Outlook মাগাজিনের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক বিনোদ মেহেতার Delhi Diaries এর আমি ছিলাম একনিষ্ঠ পাঠক। তাঁর দুটি বই Lucknow Boy আর Editor Unplugged আমার প্রিয় বইগুলির অন্যতম। দ্বিতীয় বইটি প্রকাশিত হওয়ার কিছুদিন আগে Scroll.in ম্যাগাজিনকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে বিনোদ জানান "I specialise in self-mockery because I come from Lucknow. I developed an early taste for self-mockery. I think to mock yourself, you have to have a certain confidence in your ability. Not everybody can mock themselves. So in a way, I am paying a compliment to myself" Self-mockery ‘র বাংলা প্রতিশব্দ পাচ্ছি "স্ব উপহাস"। খুব একটা সুবিধার লাগলো না। তবে তার থেকেও চিন্তার ব্যাপার (আমার কাছে অন্তত) সাম্প্রতিক বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে Self-mockery‘র অনুপস্থিতি। অথচ রবীন্দ্রনাথ, মুজতবা আলী, শিবরাম এবং আরো অনেকের লেখায় একসময় অবধি নিজেকে উপহাসের ধারা ক্ষুরধার ভাবেই বজায় ছিল। সম্ভবত খুব সচেতন ভাবেই সুভাষ মুখোপাধ্যায় এই Self-mockery কে ব্যবহার করেন তাঁর বহু কবিতায় ও গদ্যে। যার উজ্জ্বলতম উদাহরণ মনে হয় "কাল মধুমাস" কবিতার এই কটি লাইন "...... যাই কিছুক্ষণ গিয়ে বসি যে পুকুরে মাছ গুলো জলের গভীরে দিচ্ছে ঘাই ফাতনায় বেঁধানো থাকবে চোখ পাশে বসে থাকবে হয়তো বুড়ো মত লোক পরক্ষণে মনে হবে আরে রাম রাম লোকটা তো আমারই বয়সী ..." ভনিতা ছেড়ে এবার বলেই ফেলি, আমার কলম ধরার একটি প্রধান উদ্দেশ্য বাংলা সাহিত্যের এই বিলুপ্তপ্রায় ধারাটিকে নিজের মতো করে বাঁচিয়ে রাখা। প্রশ্ন উঠতে পারে কিম্ভূত কে বেছে নিলাম কেন? মুল অনুপ্রেরনা অবশ্যই সুকুমার রায়ের কিম্ভূত কবিতাটি। তবু আরও দুটি কথা বললে ব্যাপারটা হয়তো আরেকটু পরিষ্কার হবে। প্রথমটি হলো ২০১৩ সালে বইয়ের দেশে প্রকাশিত নাট্যকার মনোজ মিত্রের সাক্ষাৎকারের এই অংশটি " … বছর আটেক বয়সে গায়ের বয়স্কদের একটা থিয়েটার দেখেছিলাম … শরৎচন্দ্রের ‘রামের সুমতি’। সেই অভিনয় দেখে সেদিন গায়ের দর্শকও হেসে কুটোপাটি। এমনই বিতিকিচ্ছিরি কান্ড সেটা। কারো গোঁফ খুলে যাচ্ছে, অভিনেতা চরিত্রের গাম্ভীর্য বজায় রেখে সেটাকে আটকাবার চেষ্টা করছে, কেউ পার্ট ভুলে গিয়ে আমতা আমতা করছে। তখন নারীচরিত্রে পুরুষরা অভিনয় করত - শাড়ি সায়া সামলাতে সামলাতে প্রাণ যাচ্ছে বেচারি ছেলেদের, কথা বলবে কি! গোটা মঞ্চটা যেন বাস্তবের এক কিম্ভূত সংস্করণ …" দ্বিতীয়টি কিছু বছর আগে শোনা বাংলাদেশের শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মী আনুশেহ আনাদিলের TEDx এর মঞ্চে উপস্থাপনা। আনুশেহ নিজের পরিচয় দিতে গিয়ে Paradoxical Mess শব্দটি ব্যবহার করেন। গুগল ট্রান্সলেটরে এর কোনও বাংলা প্রতিশব্দ পাই না। তবে শব্দটি আমার নিজের জীবনকে বোঝাতে বেশ মোক্ষম মনে হয়। পূর্বে উল্লিখিত Self-Mockery, বাস্তবের বিভিন্ন কিম্ভূত সংস্করণ আর এই Paradoxical Mess এসবই আমার লেখালেখির উপাদান আর অনুপ্রেরণা। সুকুমারের কিম্ভূত চরিত্রটির মতো আমি অনেক কিছুই করতে এবং জানতে চেয়েছিলাম। কৈশোরে পেশাদার অভিনেতা হবার ইচ্ছে ছিল, পাকেচক্রে হলাম সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। বাংলা, বিহার,আসামে এক তাল মাটি আর কয়লা ঘেঁটে ভাবলাম এসব ছেড়ে আরো পড়াশুনো করে প্রোফেসর হবো। সেইমত প্রস্তুত হচ্ছিলাম। আচমকা তথ্যপ্রযুক্তির জোয়ারে ভেসে, পঁচিশ বছর এদেশ সেদেশ ঘুরে এখন এক অতিকায় বহুজাতিক সংস্থার ছোট্ট এক কোনে কোনরকমে টিকে আছি। আনুশেহ TEDx এর মঞ্চে Paradoxical Mess কে ব্যাখা করতে অনন্য কন্ঠে গেয়ে উঠেছিলেন জহির আহমেদের "তোমার ঘরে বসত করে কয়জনা মন জানো না ... "। আমি গান গাইলে ভীষ্মলোচন শর্মাও লজ্জা পেতে পারেন, এমতাবস্থায় অধমের বর্তমান দশা বোঝাতে কিম্ভূত কবিতার এই কটি লাইনই যথেষ্ট বলে মনে করি " নই ঘোড়া, নই হাতি, নই সাপ বিচ্ছু মৌমাছি প্রজাপতি নই আমি কিচ্ছু । মাছ ব্যাং গাছপাতা জলমাটি ঢেউ নই, নই জুতা নই ছাতা, আমি তবে কেউ নই !" তাই এই পুঁথি শুধুই জনৈক কিম্ভূতগ্রস্তের আত্মদর্শন এবং অন্যান্য হিজিবিজির এক সংকলন যা সাহস করে পড়ে দেখতে পারেন, যদিও, না পড়ে ঘুমিয়ে পড়লেও বিশেষ ক্ষতি নেই ... মে, ২০২২ সাহায্যসুত্র ও ঋণস্বীকার 1. Legendary editor Vinod Mehta passes away - Scroll.in, March 8, 2015 2. Melting feminism, religion and revolution with folk music - Anusheh Anadil at TEDxDhaka 3. মনোজ মিত্রের সাক্ষাৎকার - বইয়ের দেশ, অক্টোবর - ডিসেম্বর, ২০১৩












