মহাসঙ্কটে বঙ্কু
- Subhadeep Ghoshal

- Oct 12, 2022
- 12 min read
Updated: Oct 14, 2022

সম্প্রতি গাত্রবেদনা খুব বেড়ে যাওয়ার চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়েছিলাম। বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার পর জানা যায় শরীরে ভিটামিন ডি এর পরিমাণ খুবই কমে গেছে। ডাক্তারবাবু যা যা নিদেন দেন তার মধ্যে একটি হল দৈনিক ন্যূনতম আধঘণ্টা প্রাতঃভ্রমন। সেই নির্দেশ মতো বাড়ির কাছের একটি পার্কে হাঁটাহাঁটি করে ভিটামিন ডি বাড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছিলাম। কয়েকদিন সকালে বৃষ্টি হওয়ায় বেরোনো হয় নি। সেদিন আকাশে শরৎকালের তুলো তুলো মেঘ। প্রবল উৎসাহে হাঁটতে হাঁটতে জুতোয় পাথরকুচি ঢুকে যাওয়ায়, পার্কের বেঞ্চে বসে সেটা বার করে আবার হাঁটা শুরু করতে যাব, এমন সময় দেখি পাশে এক ভদ্রলোক আকাশের দিকে তাকিয়ে খুব মন দিয়ে কি যেন দেখছেন। ভাবলাম হয়তো উড়ন্ত কোনও বস্তুর দিকে ওনার নজর পড়েছে - পাখী, প্লেন কিম্বা বেলুন, হয়তো বা ইউ. এফ. ও.। ওনার দৃষ্টির অভিমুখ বরাবর আকাশের দিকে তাকিয়ে আমি উল্লেখযোগ্য কিছু খুঁজে পেলাম না। এরমধ্যে দেখলাম ফোনের ক্যামেরায় ছবিও তুললেন, তারপর একটা নোটবুক বার করে কিসব লিখতে শুরু করেছিলেন, এমন সময় আমার বিহ্বল দশা ওনার চোখে পড়ে যায়। অল্প হাসি বিনিময় ও খুচরো আলাপের পর জানতে পারি ভদ্রলোকের নাম বঙ্কুবিহারী, পার্কের কাছেই একটি ফ্ল্যাটে থাকেন। এরপর আমার কৌতূহলকে নিবৃত্ত করতে, ওনার অন্তরীক্ষ পর্যবেক্ষণের উদ্দেশ্য এবং নেপথ্য কাহিনী বিশদে বর্ণনা করেন। পুরো ব্যাপারটা এতটাই অভাবনীয় যে আপনাদের না শুনিয়ে পারলাম না
বঙ্কুবিহারীর কর্মজীবন

বঙ্কুবাবু কিছুদিন আগে অবধি একটি বৃহৎ তথ্য প্রযুক্তি সংস্থায় কর্মরত ছিলেন। এমনিতে তথ্যপ্রযুক্তিতে চাকরির বাজার এখন খুব গরম। দু ডবল, তিন ডবল বা তারও বেশি বেতনের চাকরির প্রস্তাব নিয়ে সংস্থাগুলি একে অন্যের কর্মচারীদের ডাকাডাকি করছে আর কর্মীরাও সুযোগ বুঝে দরাদরি করে নিজেদের দাম বাড়িয়ে নিচ্ছেন। তবে বঙ্কুবাবুকে কেউ ডাকাডাকি করেনি। তার একটি কারণ এই “মহা ইস্তফা” বা “গ্রেট রেজিগনেশান” পর্বটির গণ্ডী মূলতঃ তরুণ বা বড়জোর মধ্যবয়স্ক কর্মীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ। বঙ্কুবাবুর বয়স পঞ্চাশের ওপর, ছাব্বিশ বছর চাকরি হয়ে গেছে, বহু দেশ ঘুরে মাথার ঘাম পায়ে ফেলেছেন, পদোন্নতি হয়েছে নামমাত্র। তথ্য প্রযুক্তির কারিগরি কুশলতা সদা পরিবর্তনশীল। সেজন্য একটু বয়স বাড়লেই বুদ্ধিমানেরা প্রযুক্তিবিদ থেকে কর্মকর্তা হয়ে যান ছোট বড় নানান মাপের। তারপর উপরওয়ালাদের তদ্বির আর অধস্তনদের তুলোধোনা করে ধাপে ধাপে উপরে উঠতে থাকেন। বঙ্কুবাবু এসব ব্যাপারে যথেষ্ট কাঁচা, তিনি ছাব্বিশ বছরেও মাঝারি মাপের প্রযুক্তিবিদ হয়ে হাতে কলমে ( বা হাতে কীবোর্ডে ) সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করতেন, তাই তাঁর বাজারদর ক্রমশই কমে যাচ্ছিল। তবু ওনার আশা ছিল আরও বছর তিনেক চাকরিটা টিকিয়ে রাখতে পারবেন। কিন্তু একটি সাম্প্রতিক ঘটনায় সে আশা হাওয়ায় মিলিয়ে যায় এবং বাহান্ন বছর বয়সেই বঙ্কুবিহারী কর্মজীবনে ইতি টানতে বাধ্য হন।
বঙ্কুবাবুর কর্মজীবনের এই অন্তিম পর্বের নেপথ্য খলনায়ক একটি স্লোগান। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলির সৌজন্যে স্লোগান ব্যাপারটি আমাদের নিত্য সঙ্গী। শৈশব থেকেই স্লোগানের আবহে আমরা ঋদ্ধ হয়েছি, বিভিন্ন কালে রাজনৈতিক পালাবদলের পাশাপাশি স্লোগানের বিবর্তনে আমরা চমৎকৃত হয়েছি। যেমন ধরুন -
“আচ্ছে ডিম”
“ফু, ফুটো, ফানুস”
“ঢক্কানিনাদ সর্বশক্তিমান, কারণ উহা সত্য”
“রসই আমাদের ভিত্তি, মালপো আমাদের ভবিষ্যৎ”
“গোলি মারো হুলোকো”
“মেসোকে বলো”
“পাড়ায় সাবধান”
.. ইত্যাদি, ইত্যাদি। রাজনৈতিক স্লোগানের মতো তীব্র এবং সর্বত্রগামী না হলেও - মিডিয়া, বিপণন এমনকি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলিও স্লোগানকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে থাকে। কর্পোরেট দুনিয়ায় এই স্লোগানকে বলা হয় ট্যাগলাইন। প্রত্যেক সংস্থারই নিজস্ব একটি ট্যাগলাইন থাকে, যেমন “পড়তে হয় নয়তো ছিঁড়তে হয়”, “ভুতকে ছাড়া কাউকে ভয় করিনা” বা “অমুকের গয়নায় সাজুন ও সাজান” ইত্যাদি। বঙ্কুবাবুর কোম্পানির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী সংস্থাটি প্রগতিশীল টাইপের, তাঁদের বর্তমান ট্যাগলাইন "পরিবর্তনকে জড়িয়ে ধরুন" - যা একটু গায়ে পড়া ধরনের হলেও, লাইনটিতে সংস্থাটির আন্তরিকতা প্রশ্মাতীতভাবে ফুটে উঠেছে। বঙ্কুবাবুর সংস্থা তুলনামূলকভাবে যথেষ্ট রক্ষণশীল, কিছুদিন আগে পর্যন্ত তার ট্যাগ লাইন ছিল "নিশ্চিন্ত থাকুন"। বঙ্কুবাবুও নিশ্চিন্তে ছিলেন। কিন্তু কিছুকাল আগে থেকে যে নতুন ট্যাগলাইনটি সংস্থার আকাশে বাতাসে মন্ত্রের মতো উচ্চারিত হতে থাকলো সেটি হলো
বিশ্বাসে মিলায় বস্তু !
আর এইখানেই বাধল গোল। বঙ্কুবাবু খুঁতখুঁতে সংশয়বাদী মানুষ। সবকিছুতেই উল্টো কথা বলার ঝোঁক অত্যন্ত প্রবল। সহজে কোনো সিদ্ধান্ত মেনে নেয়ার থেকে তর্কে বহুদূর যেতেই উনি পছন্দ করেন। এমনিতে এই তেএঁটে টাইপের স্বভাবের জন্য কর্মকর্তাদের বিশেষ সুনজরে কোনদিনই ছিলেন না। এখন এই চরমপন্থী বিশ্বাসের আবহে তিনি বুঝতে পারলেন, নতুন এই ট্যাগলাইনটির মধ্যে দিয়ে আসলে যে বার্তা সংস্থা কর্মীদের দিতে চাইছে তা হল - "প্রশ্নহীন বিশ্বাসের সঙ্গে উপরওয়ালার সুরে সুর, বেসুরে বেসুর মেলাও, অথবা মিলিয়ে যাও"। উপরওয়ালার থেকে সরাসরি কিছু ইঙ্গিতও পেলেন যাতে বুঝলেন মিলিয়ে যাওয়ার সময় এসে গেছে। অগত্যা তিনি স্বেচ্ছাবসরের সিদ্ধান্ত নিয়ে কর্মজীবনে ইতি টানতে বাধ্য হলেন। দুঃখের বিষয়, এই সিদ্ধান্তের ফলে প্রশ্নহীন আনুগত্যের হাত থেকে যদিও তিনি নিষ্কৃতি পেলেন, কিছু দিনের মধ্যেই অন্য এক বিপদ মাথা চাড়া দিয়ে উঠল।
বঙ্কুবিহারীর বিপদ

অবসর গ্রহণ করে বঙ্কুবাবু প্রথম দিকটা বেশ স্বস্তিতেই ছিলেন। সৌভাগ্যবশতঃ ওনার স্ত্রী অন্য একটি নামী তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাতে মাঝারি মাপের কর্মকর্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন। সুতরাং এই আকস্মিক অবসর গ্রহণে ভাত কাপড়ে টান পড়ল না। বঙ্কুবাবুর নেশা বা শখ বলতে বই কেনা আর দামী কফি খাওয়া। ঠিক করলেন বই আর কিনবেন না। যে পরিমাণ না পড়া বই জমে গেছে তা পড়ে উঠতেই অনেক বছর লাগবে। আর প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্রাচুইটি ইত্যাদি মিলিয়ে বঙ্কুবাবুর যেটুকু সঞ্চয় আছে তাতে তার নিজস্ব হাতখরচ এবং স্বাস্থ্য বীমার কিস্তি মিটিয়েও মাঝে মধ্যে কফি খাওয়ার শখ মেটাতে অসুবিধে হয়ার কথা নয়। কিন্তু বিপদ এল সম্পূর্ণ অন্য দিক থেকে। প্রতিবেশী, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-স্বজন সর্বদা বিভিন্ন প্রশ্ন করে ব্যতিব্যস্ত করে তুলল
“বঙ্কু, তাহলে এখন কি করার কথা ভাবছো ?”
“বঙ্কুদা, কোন কোম্পানি খুলছো নাকি ?”
“বঙ্কুকাকু, আপনি এখন সময় কিভাবে কাটাচ্ছেন, ওয়েব সিরিজ দেখে?”
বঙ্কুবাবু বলার চেষ্টা করেছিলেন - “বই পড়ছি আর কফি খাচ্ছি”। বুঝলেন তাতে লোকে ভাবছে উনি কিছু চেপে যাচ্ছেন। এখন সবকিছুর মাপকাঠি সোশাল মিডিয়া। সুতরাং এই পারিপার্শ্বিক চাপে বঙ্কুবাবুর মনে হল এমন একটা কিছু একটা নিয়ে থাকা দরকার যা দিয়ে সোশাল মিডিয়ায় ঢাক পেটানো যাবে। খুব জোরে না হলেও, কয়েকদিন মৃদু ভাবে পেটালেই চলবে। প্রথমেই তিনি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় ও লোকপ্রিয় পথটি বেছে নিলেন - ফেসবুকে কবিতা পোস্ট করে ফেবুকবি হিসেবে নিজেকে তুলে ধরা।
বঙ্কুবিহারীর কাব্যচর্চা

বঙ্কুবাবু যৌবনে বা কর্মজীবনে কখনো কবিতা লেখেন নি। তবে ওনার যখন দশ বছর বয়স, তখন একটি কবিতা উনি লিখেছিলেন। মিসেস থমসন নামক জনৈক ইংরেজ মহিলার জীবন সংগ্রামের মরমী বর্ণনা ছিল চার লাইনের সেই কবিতায়
হ্যালো মিসেস থমসন
তোমার কি মিস কম son?
টম, হ্যারী আর জন, বিল
সব মিলে কি কম bill ?
এই মিসেস থমসন আসলে কে এবং তিনি কিভাবে বালক বঙ্কুবিহারীর প্রেরণা জাগিয়েছিলেন, তা ওনার বিশেষ মনে নেই। তবে এটা অবশ্যই মনে আছে যে গুরুজন স্থানীয় দু একজনকে কবিতাটি শোনানোয় তাঁরা ওঁকে এসব লিখে সময় নষ্ট না করে যোগ ব্যায়াম বা সাঁতার শিখতে পরামর্শ দেন। ইদানীং বঙ্কুবাবুর প্রাক্তন সহকর্মী বা সহপাঠীদের মধ্যে অনেকেই অনর্গল কবিতা লিখে সোশাল মিডিয়া প্লাবিত করে বঙ্গসাহিত্যের বোঝা ভারি করার দায় নিঃস্বার্থ ভাবে সামলে চলেছেন। কেউ কেউ আর এক ধাপ এগিয়ে, প্রকাশক বাগিয়ে, বই ছাপিয়ে, নামিদামি কবিদের হাত দিয়ে সেই সব বইয়ের প্রকাশ ঘটিয়ে সাড়া ফেলে দিয়েছেন। বঙ্কুবাবুর প্রাক্তন সংস্থাটির হোমরা চোমরা এক কর্মকর্তা এতটাই নিষ্ঠাবান কবি যে ভোর থেকে রাত্তির অবধি মিটিং করেও মধ্যরাত্রে মর্মস্পর্শী দুই তিনটি কবিতা লিখে পোস্ট না করে উনি ঘুমোতে যান না। ওনার অধঃস্তন ছোটোবড়ো কর্মকর্তারাও রেডি থাকেন। পোস্ট করা মাত্র সেই গভীর রাত্রে প্রশংসাসূচক মন্তব্যের প্রতিযোগিতায় একে অন্যকে ছাপিয়ে যাওয়ার মহারণ শুরু হয়ে যায়। চাকরি করার পাশাপাশি যদি এইসব ফেবুকবিরা যদি এইরকম সৃষ্টিশীল থাকতে পারেন অবসরপ্রাপ্ত বঙ্কুবাবুই কেন পারবেন না - এই আশা নিয়ে ওনার জীবনের দ্বিতীয় কবিতাটি লিখলেন। জনৈক হোঁৎকা হনু নামক এক রহস্যময় প্রভাবশালী ব্যক্তিত্যের প্রবল পরাক্রমের কথা বর্ণিত হয়েছে কবিতাটিতে
যদি হোঁৎকা হনু লেখে,
খবরদার হাসবে না কেউ হনুর আবেগ দেখে,
সবাই যেন অষ্টপ্রহর , ফেসবুকে চোখ রেখে
মন ভোলানো কমেন্ট দিয়ে লাইক বোতাম ঠোকে।
যদি হোঁৎকা হনু ডাকে,
সবাই যেন হনুর সভায় ভিড় জমিয়ে রাখে।
ভীষণ জোরে, নিয়ম করে, হনুর কথার ফাঁকে,
সমস্বরে হ্যাঁ হ্যাঁ রবে ঘাড় নাড়তে থাকে।
যদি হোঁৎকা হনু নাচে,
যে যেখানেই থাক না কেনো, দূরে কিংবা কাছে,
তাল মেলালে হনুর তালে, সম্ভাবনা আছে,
এই বাজারে হনুর কৃপায় যেতেও পারো বেঁচে।
তুচ্ছ ভেবে এসব কথা করছ যারা হেলা,
হোঁৎকা হনু টেরটি পেলে বুঝবে তখন ঠ্যালা।
দেখবে তখন কোন কথাটা কেমন করে ফলে,
আমায় তখন দোষ দিওনা, আগেই রাখি বলে।
কবিতাটি লিখে ওনার স্ত্রী সুনয়না দেবী কে পড়ে শোনালেন। উনি ধৈর্য সহকারে পুরোটা শুনে চারটি মন্তব্য করলেন -
১) বোঝাই যাচ্ছে এটা “কুমড়োপটাশ” কবিতাটির অক্ষম অনুকরণ
২) এটাও বোঝা যাচ্ছে কবিতা লেখার ছুতোয় বঙ্কুবাবু ব্যক্তিগত আক্রোশ মেটানোর চেষ্টা করছেন
৩) হনুকে যেভাবে ছোট করার চেষ্টা করা হয়েছে তাতে পশুপ্রেমীরা এবং বজরংবলীর পুজারীরা আপত্তি জানাতে পারেন
৪) বঙ্কুবাবুর কবিতা লেখার উৎসাহে কবি ও সমালোচক দুজনেরই সময় নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা, সুতরাং বঙ্কুবাবু আর কবিতা না লিখে বরং বাগান করার চেষ্টা করে দেখতে পারেন
সুতরাং কাব্যলক্ষ্মী অধরাই রইল। বঙ্কুবাবু, সুনয়না দেবীর উপদেশ মেনে নিয়ে বাগান করায় উদ্যোগী হলেন।
বঙ্কুবিহারীর সব্জিসাধনা

ফুল ফোটানো খুবই কষ্ট সাধ্য ব্যাপার। তাই “মনরে কৃষিকাজ জানো না, আবাদ করলে ফলত সোনা” এই মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হয়ে বঙ্কুবাবু ঢেঁড়স, বেগুন, ধনেপাতা, লেবু ইত্যাদি ফলানোর দিকে এগিয়েছিলেন, কিন্তু এক্ষেত্রে ওনাকে থামতে হলো ওনার দাদা শ্রী বল্টুবিহারীর সুপরামর্শে।
বল্টুবাবু অবসর নিয়েছেন বেশ কিছুদিন হল। তারপর গভীর অধ্যাবসায়ের সঙ্গে সবজি চাষে নিজেকে সমর্পিত করেছেন। কিন্তু বহু পড়াশোনা, বিশেষজ্ঞদের মতামত, নানাবিধ সার ও কলম, বিভিন্ন ধরনের ডাল ছাঁটবার ও মাটি কোপাবার যন্ত্রপাতিতে ঘর উজাড় করেও এখনো লেবু গাছে লেবুর চিহ্ন নেই, ধনেপাতা মাটি ফুঁড়ে উঁকি দেয়নি, ঢেঁড়স গাছে ফুল মাত্র দেখা দিয়েছে। বল্টুবাবুর চিন্তায় পড়লে গোঁফ কামড়ান। সম্প্রতি ফলনের চিন্তায় ওনার গোঁফ অর্ধেক হয়ে গেছে। এই অবস্থায় বঙ্কুবাবুও সবজি চাষের উদ্যোগ নিচ্ছেন শুনে উনি বাড়ি বয়ে এসে দু ঘন্টা কাউন্সিলিং করে ওনাকে নিরস্ত করলেন। ওনার নিজের তো আর পিছিয়ে আসার উপায় নেই, কিন্তু জেনেশুনে নিজের ভাইকে এই সর্বনাশা পথে কিছুতেই যেতে দিতে পারলেন না। বঙ্কুবাবুর বিপদের কথা শুনে তাঁর এই কিছু একটা করবার আকুতিকে সাধুবাদ জানালেন, তাঁর সঙ্গে এটাও বললেন - সবজি ফলিয়ে, তার ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় দিয়ে, কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছানোর দুরুহ প্রচেষ্টার থেকে সবজির কথা ফলিয়ে বলা অনেক সহজ। উৎস থেকে রসনা অব্দি সবজির যাত্রাপথের কত রকম বৈচিত্র যে হতে পারে, সেটা বিষয়টি নিয়ে নিষ্ঠার সঙ্গে চর্চা যারা না করেছেন তারা ভাবতেই পারবেন না। বল্টুবাবু এই তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করেছিলেন, কিন্তু সবজি ফলনের চাপে খুব বেশি সময় দিতে পারেননি, তবু বঙ্কুবাবুকে উৎসাহ দিতে বেগুন বৈচিত্র্য নিয়ে ওনার পর্যবেক্ষণ তুলে ধরলেন
"বুঝলি বঙ্কু, বোঁটায় কাঁটাওয়ালা সি গ্ৰীন কালারের যে বেগুন আমরা দেখতে পাই সেটি হল মাকরা বেগুন, সবচেয়ে সুস্বাদু আর কম তেলে ভাজা যায়, এরা বাজারে আসে বর্ষার ঠিক আগে। আর বেগুনি শরীরের উপর সাদা আঁজিটানা, মাকরার মতো গোলগাল কিন্তু মোটা কাঁটা ছাড়া বেগুনের নাম হলো পায়রা টুনি। ভর্তা খাওয়ার জন্য আদর্শ বেগুন। আবার শীতকালে বাড়িতে বেগুন সেঁকা খেতে হলে 'ৎ' এর মতো দেখতে কালচে বেগুনি রঙের শ্রীনাথ বেগুন বা সরস্বতী পূজার দিন গোটা সেদ্ধ হওয়ার জন্য ছোট আকৃতির কুলি বেগুনের বিকল্প নেই। এরকম আরো অজস্র উদাহরণ আছে। তুই যদি চারপাশের বাজার ঘুরে শাকসবজির এই বিচিত্র জগতের খাসখবর অদীক্ষিত মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার উদ্যোগ নিস তাহলে একটা কাজের মত কাজ হবে। "
বঙ্কুবাবু সেই উপদেশ মতো বাজারে বাজারে ঘুরে তথ্য সংগ্রহে লেগে পড়লেন। প্রথম দিকে ভালোই চলছিল। কুমড়ো দিয়ে শুরু করলেন এবং জানলেন - গরমকালে কুমড়োরা আসে শিলিগুড়ি এবং তারকেশ্বর থেকে। শিলিগুড়ির কুমড়ো সুস্বাদু, খোসা পাতলা। ভেতরটা একটু লালচে। তারকেশ্বরের কুমড়ো আকারে বড়ো, তবে স্বাদ শিলিগুড়ির মতো নয়। বর্ষাকালে হাল্কা হলুদের ওপর সবুজ ছিট ছিট ডিজাইনের কুমড়োরা আসে বাঁকুড়া থেকে আর শীতকালের গোলগাল কালচে ধরনের কুমড়োরা, বনগাঁর চাঁদপাড়া থেকে। তো কুমড়ো সম্বন্ধে এইরকম তথ্য সংগ্রহ করে বঙ্কুবাবু ঢ্যাঁড়শের দিকে এগোবেন ভাবছিলেন, মুশকিল হল আশেপাশের বাজারের সবজি বিক্রেতারা ওনাকে বেশ সন্দেহের চোখে দেখতে শুরু করলেন। গোড়ার দিকে ওনার কৌতূহলী প্রশ্নের উত্তর দিতে ওঁদের বিশেষ আপত্তি ছিল না, বরং অত্যুৎসাহী খদ্দের মনে করে বেশ প্রশ্রয়ই দিয়েছিলেন। কিন্তু দিনের পর দিন সকালে খাতা হাতে, সবজি না কিনে শুধু তার খুটিনাটি লিপিবদ্ধ করছেন দেখে ওঁরা সম্ভবতঃ মনে করলেন যে ভদ্রলোকের মাথা খারাপ নয়তো ইনি সব্জির দোকান খোলার ধান্দা করছেন। সুতরাং বঙ্কুবাবু প্রশ্ন করলেই সেইসব বিক্রেতারা মামুলি কোনো একটা উত্তর দিয়ে অথবা না শোনার ভান করে শশঃব্যস্ত হয়ে এড়িয়ে যেতে থাকলেন। এরপর একমাত্র উপায় ছিল দূর দুরান্তে নিত্য নতুন বাজারে গিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাওয়া - কিন্তু তাতে পরিশ্রম ও খরচ দুইই বেশী। বঙ্কুবাবু বুঝলেন, তাঁর যা উদ্দেশ্য - কম পরিশ্রমে ও অল্প খরচে অভিনব কিছু একটা করে ঢাক পেটানো, তা এই সব্জী গবেষণাতেও সম্ভব হবে না।
মহাসঙ্কটে বঙ্কু

দুটি সম্ভাবনাময় প্রচেষ্টা এভাবে অঙ্কুরেই বিনষ্ট হওয়াতে বঙ্কুবাবু এবার সত্যসত্যই ভারী বিপদে পড়লেন। দাদা বল্টুবিহারী বা স্ত্রী সুনয়না দেবীও কোনো আইডিয়া দিতে পারলেন না। এদিকে অবসর গ্ৰহণের পর মাস দুয়েক কেটে গেছে, কৌতূহলী প্রশ্ন করিয়েরাও হাল ছেড়ে দিয়েছেন, কিন্তু বঙ্কুবাবু মরীয়া। কিছু একটা করেই ছাড়বেন। একবার ভাবলেন বার্ড ওয়াচিং করবেন, কিন্তু এক পক্ষী বিশারদ বন্ধুর সঙ্গে কথা বলে বুঝলেন সে সব্জী ফলানোর থেকেও পরিশ্রমসাধ্য ও খরচসাপেক্ষ ব্যাপার। কলকাতার আশেপাশে পাখীরা বহু আগেই বিদায় নিয়েছে, পক্ষী সন্ধানে বনে জঙ্গলে, খালে, বিলে, গ্রামে গ্রামান্তরে ঘুরে বেড়াতে হবে, যা বঙ্কুবাবুর পক্ষে অসম্ভব। এরপর ওনার মনে হলো আলেক্স বেলোস কথিত রড উডাল নামে এক ব্রিটিশ ভদ্রলোকের কথা - ভদ্রলোকের নেশা ট্রিগ ব্যাগিং। ট্রিগ হল পিরামিডাকৃতি সিমেন্টের পিলার বিশেষ, একসময় ব্রিটেনের ম্যাপ নতুন করে বানানোর জন্য সারা দেশ জুড়ে লাগান হয়েছিল হাজারে হাজারে। স্যাটেলাইট সার্ভের যুগে ম্যাপ বানাতে ট্রিগের প্রয়োজন ফুরিয়েছে, কিন্তু তার জায়গায় একদল মানুষের নেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে ট্রিগ ব্যাগিং, অর্থাৎ সারা দেশ ঘুরে ট্রিগ দর্শন করে বেড়ানো। বঙ্কুবাবু এরকম কিছু করা যায় কিনা একবার ভাবলেন। মুশকিল হল ট্রিগের সমগোত্রীয় কিছু এদেশে আছে কিনা বঙ্কুবাবুর জানা নেই, থাকলেও ঝোপে ঝাড়ে, লোকের বাগানে সিমেন্টের পিরামিড খোঁজার চেষ্টা করতে গেলে সাপের কামড় বা ছেলেধরা সন্দেহে গণধোলাই খাওয়ার সম্ভাবনাই বেশী। অগত্যা বঙ্কুবাবু আশা ছেড়ে দিয়ে এক বিকেল বেলা পার্কের বেঞ্চে বসে ভাবছিলেন একমাত্র যদি দৈবাৎ আকাশ থেকে ক্রেনিয়াস গ্ৰহের অ্যাং বা গোলাপীবাবু এসে পড়েন তাহলেই হয়তো এই সঙ্কটমোচন সম্ভব। এমন একটা সময় তার মাথায় একটি চমৎকার আইডিয়া এল - একেবারে আকাশ থেকেই। বাকীটা বঙ্কুবাবুর বয়ানেই শোনা যাক -
মেঘসন্ধানী বঙ্কুবিহারী
"বুঝলেন মশাই, সেদিন আকাশের তাকিয়ে আমার ছোটোবেলার পড়া সুকুমার রায়ের লেখা একটা কবিতা মনে পড়ে গেল
আকাশের ময়দানে বাতাসের ভরে,
ছোট বড় সাদা কালো কত মেঘ চরে।
কচি কচি থোপা থোপা মেঘেদের ছানা
হেসে খেলে ভেসে যায় মেলে কচি ডানা।
কোথা হতে কোথা যায় কোন্ তালে চলে,
বাতাসের কানে কানে কত কথা বলে।
বুড়ো বুড়ো ধাড়ি মেঘ ঢিপি হয়ে উঠে-
শুয়ে ব'সে সভা করে সারাদিন জুটে।
কি যে ভাবে চুপ্চাপ, কোন ধ্যানে থাকে,
আকাশের গায়ে গায়ে কত ছবি আঁকে। ..
তারপরেই মনে হল এই মেঘ ব্যাপারটাকেই তো কাল্টিভেট করে দেখা যেতে পারে! সুকুমার রায় করতেন নিশ্চয়ই, আরও কিছু দিন বেঁচে থাকলে, কিন্তু অতো কম বয়সে নিজেই মেঘমুলুকের ঝাপসা রাতে বিদায় নিলেন। আর অন্য কবিরা মেঘ ছেড়ে বৃষ্টি নিয়েই মগ্ন থাকলেন, যেমন ধরুন ‘মেঘবালিকার জন্য রুপকথা’য় পৃথিবীর কথা, অরণ্যের কথা, বৃষ্টির কথা আছে, মেঘের কথা প্রায় নেই বললেই চলে। অথচ আকাশের বিশাল ক্যানভাসে কত রকমের মেঘ, কত রকমের রঙ মিশিয়ে কত না চিত্রকল্প বানিয়ে চলেছে প্রতি মুহূর্তে - প্রকৃতির সৌন্দর্যের, শক্তির, অস্তিত্বের নশ্বরতার কত চলচ্ছবি তৈরি হচ্ছে, ভেঙে যাচ্ছে, আপনার চোখের সামনে। এক টুকরো মেঘ হয়তো দেখতে সাধারণ, কিন্তু স্থান ও কালের প্রেক্ষিতে অনন্য। আপনার আমার মতো মানুষেরাও তো তাই। আবার মানুষের সঙ্গে অমিলটা কোথায় বলুন তো? আপনি আমি যে কতটা আলাদা - তা দূর থেকে অনেক মানুষের ভিড়ে দেখলে বোঝার উপায় নেই, কাছে এলে তবেই টের পাওয়া যাবে - মেঘের ব্যাপারটা উলটো, এরোপ্লেনে বসে দেখেছি প্লেন যখন মেঘের মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে চারদিক ধোঁয়া ধোঁয়া, কখনো হালকা, কখনো ঘন কুয়াশার মতো - সেই মেঘকেই নীচে থেকে দেখলে বা যখন প্লেন যখন মেঘের ওপরে উঠে যাচ্ছে তখন দেখলে, কত রকমের নকশা যে সারা আকাশ জুড়ে, মুগ্ধ হয়ে দেখতে হয়। এই যে দেখুন এখুনি ওই মেঘের টুকরোটাকে দেখে মনে একটা খরগোশ লাফাচ্ছে, আপনি হয়তো অন্য আর একটা মেঘে খুঁজে পাবেন সিংহের মুখ, কখনো মনে হবে স্টিম ইঞ্জিন ঢুকে যাচ্ছে মেঘের টানেলে, কখনো বা দেখবেন রঁদ্যার ভাস্কর্যের মতো গভীর চিন্তামগ্ন দার্শনিক বা চুম্বনরত মানুষ মানুষী। এই যে মেঘের আকৃতির সঙ্গে, মানুষের স্মৃতি আর কল্পনার একটা মিথস্ক্রিয়া - একটু পড়াশুনো করে জানলাম এই ফেনোমেননটির একটা বিজ্ঞানসম্মত নাম আছে - পেরিওডোলিয়া। তবে সব রকম মেঘে নয়, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ছোট থেকে মাঝারি চেহারার কিউমুলাস হিউমিলিস বা কিউমুলাস মিডিওক্রিস জাতীয় মেঘেই এটার সম্ভবনা বেশী। এমনিতে এই ধরনের মেঘে বৃষ্টি হয় না, কিন্তু হাওয়ার গতি বেড়ে গেলে ছোট আর মাঝারি মেঘের দল মিলেমিশে যখন বড়সড় আকার নেয় তখন তা রীতিমত বৃষ্টির মেঘ, যেমন কিউমুলাস কনজেস্টাস। আরও বড় হয়ে যখন তা বিশাল শরীরের কিউমুলোনিম্বাস তখন সেই যে কবি বলেছেন "শুনি টংকার তাহার পিণাকে" - সেই কালবৈশাখীর মতো ঝড়বৃষ্টির মেঘ।

এছাড়া আছে আম্ফানের মতো বিশাল ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্কেত নিয়ে থমথমে আকাশ ভরে থাকা স্ট্রাটোকিউমুলাস, আকাশ জুড়ে ছড়িয়ে থাকা পেঁজা তুলোর মতো অল্টোকিউমুলাস স্ত্র্যাটিফর্মিস, নীল আকাশের গায়ে এলোমেলো তুলির টানের মতো সিরাস, জেলিফিসের ঝাঁকের মতো অল্টোকিউমুলাস ভার্গা, যত্ন করে আঁকা সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো কেলভিন হেলমোল্ট্জ - এরকম আরও কত অজস্র বৈচিত্রে ভরা এই মেঘের জগত।

এই সব জেনে মনে হলো ট্রিগ ব্যাগারদের মতো মেঘসন্ধানীদের একটা ক্লাব খুলতে পারি, তা হলে হয়তো আমাদের মতো মানুষদের একটা হিল্লে হতে পারে। ক্লাবের একটা ওয়েব সাইট লাগবে, সদস্যরা তাদের মেঘের কালেকশান সেখানে তুলে ধরবে। অন্য সদস্যরা সে সংগ্রহ কতটা ভাল লাগলো তা জানাবে রেটিং এর মাধ্যমে। ব্যাপারটা আর একটু আকর্ষণীয় করার জন্য স্কোরিং এর ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে, যত দুষ্প্রাপ্য প্রজাতির মেঘ ততো বেশী স্কোর, আর এইসব রেটিং আর স্কোরের ভিত্তিতে, বছরের শেষে শ্রেষ্ঠ মেঘসন্ধানীর শিরোপা হিসেবে মেঘশ্রী বা মেঘবিভুষণ উপাধি দেওয়া হবে, সঙ্গে পুরস্কার হিসেবে থাকবে প্রিয় মেঘের সঙ্গে সেলফি, ওয়েব সাইটের কভার পেজে প্রকাশ করার সুযোগ - অর্থাৎ নাম আর যশ দুইই। অর্থাগম অবশ্য হওয়ার সম্ভাবনা নেই, তবে সারা কর্মজীবন মাথা নীচু করে থেকে, মাথা তুলে মেঘসন্ধানের মধ্যে অন্য রকম অর্থের সন্ধান, পেয়ে যেতেও পারেন চাইলে। কি বলুন ?"
এই দীর্ঘ বক্তব্যের শেষে প্রশ্নটা আমার দিকে ছুঁড়ে দিলেন বঙ্কু বাবু। এমন সময় আমার মোবাইল ফোন বেজে উঠলো। এক ঘন্টার ওপর হয়ে গেছে। এখনো ফিরছি না দেখে গিন্নি অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। বঙ্কুবাবুকে বিদায় জানিয়ে চটপট বাড়ির দিকে রওনা হলাম। তাড়াহুড়োয় ওনার ফোন নাম্বার নিতে ভুলে যাই। এর পরে কয়েকদিন সকালবেলা বৃষ্টি হওয়ায় এবং দুদিন হালকা সর্দিজ্বর হওয়ায় অনেকদিন হাঁটতে বেরনো হয় নি। সেরে উঠে আবার হাঁঁটতে গিয়ে আর ভদ্রলোকের দেখা পাই নি। নিউটাউনের রাস্তায় এখন চারদিক খুঁড়ে কি এক মহাযজ্ঞ চলছে। পথচারীদের বিভীষিকা! ভয় হয়, মাথা তুলে মেঘ সন্ধান করতে গিয়ে বঙ্কুবিহারী শেষ অবধি গর্তে পড়ে আহত হয়ে গেলেন না তো ?
অক্টোবর, ২০২২
বিধিসম্মত সতর্কীকরণ ও অন্যান্য স্বীকারোক্তি
বলাই বাহুল্য বঙ্কুবাবু এবং ওনার কথিত বেশীর ভাগ চরিত্রই কাল্পনিক - যেমন সুনয়না দেবী, বল্টুবিহারী, হোঁৎকা হনু ইত্যাদি। উল্লিখিত স্লোগান এবং ট্যাগ লাইনগুলিরও কোনও বাস্তব ভিত্তি অবশ্যই নেই। এইসব চরিত্র এবং স্লোগানগুলির সঙ্গে বাস্তবের কোনও ব্যক্তির বা প্রতিষ্ঠানের বা স্লোগানের মিল যদি দৈবাৎ খুঁজে পাওয়া যায় তা সম্পূর্ণরূপে অনিচ্ছাকৃত। মনোযোগী পাঠকপাঠিকা নিশ্চয়ই এটাও ধরে ফেলেছেন যে এ লেখার সিংহভাগই ধার করা, সুতরাং সেই সংক্রান্ত মূলরচনা এবং তথ্যসূত্রের একটি বিস্তারিত তালিকা নীচে দেওয়া হল
লেখার শিরোনামটির আইডিয়া সত্যজিৎ রায়ের "মহাসঙ্কটে শঙ্কু" এবং "বঙ্কুবাবুর বন্ধু" এই দুটি গল্পের নাম থেকে নেওয়া।
বঙ্কুবিহারীর কাব্যচর্চা অংশের হোঁৎকা হনু কবিতাটি সুকুমার রায়ের "কুমড়ো পটাশ" কবিতার অনুকরণে রচিত 🔗
বঙ্কুবিহারীর সব্জিসাধনা অংশের বেগুন ও কুমড়োর বর্ণনা রজতেন্দ্র মুখোপাধ্যায় রচিত "রবিবারের বাজার" থেকে ধার করা। বাঙালীর নিত্যদিনের বাজার, রসনা আর অনন্য সাধারণ কিছু মানুষের স্মৃতি নিয়ে লেখা এই বইটি নিঃসন্দেহে বাংলা সাহিত্যের একটি সম্পদ। রজতেন্দ্রর লেখার সঙ্গে দেবাশীষ দেবের অনবদ্য অলঙ্করণ এই বইয়ের বাড়তি পাওনা। ২৫ জানুয়ারি ২০২০ তারিখের আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত পুস্তক সমালোচনাটি - "ছবির সঙ্গে মিলিয়ে পড়তে হবে রজতেন্দ্রর লেখা" এক্ষেত্রে উল্লেখ্য 🔗
মহাসঙ্কটে বঙ্কু অংশের রড উডাল এবং ট্রিগ ব্যাগিং সংক্রান্ত তথ্যের উৎস অ্যালেক্স বেলোস রচিত বই Alex Through the Looking-Glass: How Life Reflects Numbers and Numbers Reflect Life. বইটি ২০১৫ সালের Royal Society Winton Prize for Science Books এর জন্য মনোনীত হয় 🔗
মহাসঙ্কটে বঙ্কু অংশে উল্লিখিত ক্রেনিয়াস গ্ৰহের অ্যাং এবং গোলাপীবাবু চরিত্রদুটির উৎস সত্যজিৎ রায়ের দুটি গল্প, যথাক্রমে "বঙ্কুবাবুর বন্ধু" এবং "অঙ্কস্যার, গোলাপীবাবু ও টিপু"।
মেঘসন্ধানী বঙ্কুবিহারী অংশে ব্যবহৃত মেঘের ছবি গুলির বেশির ভাগই Wikimedia Commons থেকে সংগৃহীত। উৎসের সম্পূর্ণ তালিকা লেখার শেষে দেওয়া আছে।
মেঘসন্ধানী বঙ্কুবিহারী অংশে উল্লিখিত কবিতাটি সুকুমার রায়ের "মেঘের খেয়াল" কবিতার অংশবিশেষ 🔗
মেঘসন্ধানী বঙ্কুবিহারী অংশের এবং সম্পূর্ণ লেখাটিরই প্রেরণা মেঘসন্ধানী, ঢেউবিশারদ গ্যাভিন প্রেতর-পিনে । আপাত অর্থহীন অকাজের মধ্যে জীবনের অন্য অর্থ খুঁজে বেড়ানো প্রেতর-পিনে ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠা করেন Cloud Appreciation Society - বর্তমানে যার বিস্তৃতি ১২০ টি দেশে, সদস্য সংখ্যা ৫০ হাজারের কিছু বেশী। প্রেতর-পিনের লেখা মেঘ সম্বন্ধীয় তিনটি জনপ্রিয় বই Cloudspotter’s Guide, Cloud Collector’s Handbook এবং A Cloud A Day। ২০১১ সালে প্রেতর-পিনের লেখা The Wavewatcher’s Companion বইটি Royal Society Winton Prize for Science Books পুরস্কারে সম্মানিত হয় 🔗 । ২০১৩ সালে প্রেতর-পিনে TED Talk এর স্টেজে "Cloudy with a chance of joy" নামে বক্তৃতায় তাঁর মেঘসন্ধানের দর্শনকে সুন্দর ভাবে তুলে ধরেন
Image Attributions:
Cumulus Humilis cloud: PiccoloNamek at the English-language Wikipedia 🔗
Cumulus Mediocris cloud: Kr-val at the Wilkimedia Commons 🔗
Cumulonimbus cloud: Fir0002/Flagstaffotos at the Wilkimedia Commons 🔗
Altocumulus Stratiformis cloud: LivingShadow at the Wilkimedia Commons 🔗
Stratocumulus cloud: Rollcloud at the Wilkimedia Commons 🔗
Cirrus clouds: Doggo19292 at the Wilkimedia Commons 🔗
Kelvin-Helmholz Waves : Mark Pendavingh, MY SHOT 🔗






Comments