বঙ্গীয় কারিগরী মহাবিদ্যালয়
- Subhadeep Ghoshal

- Dec 20, 2018
- 3 min read

পশ্চাতে ভাগীরথী, বোটানিক্স বামে
সে ছিল আজব স্থান, বি.ই.কলেজ নামে।
সম্মুখে রাস্তা ছিল বারোমাস খোঁড়া,
ভিতরে ছিলাম বাপু যত মুখপোড়া।
বাওয়াল দেবতার আহা কৃপাধন্য সবে,
দিনগুলো কেটে যেত মস্তি অনুভবে।
এ মহাবিদ্যালয় কথা অমৃত সমান,
সবজান্তা কবি ভনে, শোনে পুণ্যবান।
।। প্রবেশ ।।
বৃষ্টি পড়ে টাপুরটুপুর,
জুলাই মাসের শেষের দুপুর।
জল কাদা আর ঠান্ডা হাওয়ায়,
বেডিং এবং বাক্স মাথায়-
সারি সারি মুর্গী এলো !
সাহেব পাড়ায়
মুর্গী এলো,
মুচী পাড়ায়
মুর্গী এলো,
বর্গীরা তাই
হাত বাড়ালো -
দাঁড়িয়ে কেন?
সঙ্গে চলো!
স্পর্শে তোমার ধন্য হল এই তপোবন!
মুর্গী তুমি
দানা খাবে,
মুর্গী তুমি
নাচ দেখাবে,
মুর্গী তুমি
বলব যেমন,
করবে তেমন -
মুর্গী তুমি এখন মোদের বড্ড আপন!
দুপুর গেল
ভিড় বাড়ল।
বিকেল এল
ভিড় বাড়ল।
তারপর সেই বিকেল গিয়ে
সন্ধ্যা হল,
ততোক্ষণে এসে পড়েছে সব।
আর তারপরেই, শুরু হল উৎসব!
।। মুর্গীজীবন ।।
অভিজিৎকে করা হয়েছিল প্রেমিক,
আর আমি হয়েছিলাম প্রেমিকা।
ঘাস পাওয়া যায়নি,
তাই বেডসিট থেকে সুতো ছিঁড়ে,
দাঁতে কেটে বলেছিলাম "যাহ্ অসভ্য"!
সঞ্জিত হয়েছিল গাছ,
আগরওয়াল ছায়া হয়ে লুটিয়েছিল পায়ের তলায়,
সঞ্জয় বিক্রি করেছিল নিরোধের প্যাকেট,
পঙ্কজ ছিল ফটোগ্রাফার।
কাহিনী তে মোচড় ছিল,
সম্ভাবনা প্রচুর ছিল,
ইসের থেকে গড়াতে পারত কিস এ,
পারেনি,
কারণ তার আগেই
ধূমকেতুর মতো এসে,
রসভঙ্গ করেছিলেন আমাদের প্রিন্সিপাল।
আমি বোমারু বিমান হয়েছিলাম,
শিশিরকে করা হয়েছিল পাইলট;
একজন আমাকে বানিয়েছিল তার পোষা কুকুর,
গামছার বকলস গলায় হামাগুড়ি দিয়েছিলাম সারা ফ্লোর,
আর প্রত্যেক ঘরে ঢুকে ডেকেছিলাম,
ঠিক কুকুরেরই মত।
সঞ্জয় বঙ্কিমচন্দ্রের টাইটেল বলেছিল দত্ত
আর পাকিস্তানের পেসবোলারের নাম প্যাটারসন,
সুদীপ্ত বাড়ী থেকে এনেছিল পাশবালিশ,
আর সুপ্রিয় আমাদের ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে
বগল বাজিয়ে নেচেছিল -
আমি পাগল,
আমি ছাগল,
আমি ......
থাক, বাকীটুকু আর না বলাই ভালো।
।। মস্তিপর্ব ।।
দশদিন পর,
গ্রান্ডফিস্টের মাতাল রাত্তিরে,
বেপরোয়া নাচের তালে,
শেষ হল আমাদের মুর্গীজীবন।
তারপর -
অলকা,লিপি,ঝর্ণা
গ্লোব,মেট্রো,যমুনা।
ড্রয়িংবোর্ড,রিপোর্ট সিট
সেটস্কোয়ার,মাইক্রোটিপ।
ক্লাসটেস্ট,ভাইভাবোসি
মায়া হলেই ঢালাও খুশী।
বোটানিক্স বা লাভার্স লেন
অল্পস্বল্প লেনদেন।
খিস্তি মধুর আঁধার রাতে
কে সে গাঁতায় মোম আলোতে?
জল পড়ছে, কলেজ বন্ধ্,
জল নেই তাও কলেজ বন্ধ্।
জল নেই তাই কলেজ বন্ধ্,
জল নেই তাই কলেজ বন্ধ্ ....
পোশাকে রামধনু রং
অজস্র পকেট,
তাহাতে খচমচ করে
বিড়ির প্যাকেট।
যদিও রাখেনা চোখ
বইয়ের পাতাতে,
ছেঁড়াখোঁড়া কোন বই
খোঁজে মাঝরাতে?
পালটায় কথ্যভাষা
মুখে ফোটে মধু,
মুর্গী থেকে এবার দেখো
লায়েক হল যাদু!
।। পুড়কি ।।
অনেকদিন ধরেই,
একটা ফিসফিসানি ভাসছিল হাওয়ায়,
উত্তর ভারতের আন্দোলন আর
একটানা ক্লাস করার ক্লান্তি
জমা করছিল বারুদের স্তুপ।
যাদবপুরে জুতোপালিশ তাতে আগুন ধরিয়ে দিল।
আচমকা এক সকালবেলায়,
বকুলতলায়
জমা হল মায়াপিপাসু ছেলেমেয়ের দল।
কমিটি তৈরী হল,
আ্যান্টি রিজার্ভেশন আ্যাকশন কমিটি।
শুভাশীষ কোত্থেকে জোগাড় করেছিল একটা টুল,
তার ওপর উঠে দাঁড়িয়ে তারস্বরে চেঁচাল -
”বন্ধুগন! জাতপাতের এই নোংরা খেলা
আর আমরা কিছুতেই চলতে দিতে পারিনা,
আজ সময় এসেছে
আমাদের রুখে দাঁড়ানোর,
সময় এসেছে হাতে হাত মিলিয়ে প্রতিরোধের,
বন্ধুগন চলুন !
অমনি
কথা নেই, বার্তা নেই
সবাই হই হই করে চলতে শুরু করল।
কোথায় যাচ্ছে, কেন যাচ্ছে
জানা নেই,
সমস্ত কলেজ শুধু হাঁটছে।
ফার্স্টগেট থেকে ব্যাতাইতলা,
ব্যাতাইতলা থেকে ট্রামডিপো,
ট্রামডিপো থেকে বঙ্গবাসী,
অবশেষে ডি এম এর দরজায় গিয়ে থামল
সেই অগোছালো, বিশাল মিছিল।
তারপর থেকে রোজ এই -
আমরা জুতো পালিশ করলাম,
আমরা রাস্তা ঝাঁড় দিলাম,
আমরা লরিতে চেপে
মিটিং করতে গেলাম এসপ্ল্যানেডে,
আজকাল, আনন্দবাজার
সাংবাদিক, ফটোগ্রাফার
নাম, ছবি .....
এইরকম হুল্লোড় চলল সাতদিন ধরে।
শেষে,
প্রিন্সিপাল এসে,
সবাইকে দিলেন এমন কড়া ধমক -
ফাইল বগলে নিয়ে
আমরা আবার ক্লাসঘরে |
।। বাওয়ালি ।।
নির্বাচন এলে
ইউনিয়ন দখলের টানে,
মিছিলে, স্লোগানে
গরম হয়ে উঠত
কলেজের হাওয়া।
এরকমই এক নির্বাচনের বেলা
একটি নিরীহ গোছের
গাছের দখল নিয়ে
লেগেছিল তুমুল ঝামেলা।
কার পোস্টার লাগবে তার গায়ে
সমস্যা সেটাই।
গাছটি বেশ রোগা,
শরীরে তার
পোষ্টার ধরবে বা কটাই?
কি তার মহিমা কে বা জানে
তবুও স্লোগানে স্লোগানে
নিশীথ নৈঃশব্দ্য চিরে
বেচারা গাছখানি ঘিরে,
সারারাত যুযুধান
সিপি-এসএফআই!
বাওয়াল ভোর অবধি গড়ায় -
অতঃপর,
প্রোকটর,
গাছটিকে নিরপেক্ষ ঘোষণা করায়
থামে সে অপূর্ব লড়াই।
।। প্রস্থান ।।
তখন ছিলাম সবাই রাজা
সবার রাজত্বে,
যৌথ জীবন ঘুরিয়েছিল
অন্য আবর্তে।
পেরিয়ে চেনা রাস্তা গ্রামের
পেরিয়ে শহর পাড়া,
পথের নতুন বাঁকে তখন
আমরা লাগামছাড়া।
নিয়মভাঙা নেশার ঝোঁকে
না ঘুমোনোর ভোরে,
হঠাৎ দেখি হিসেব জীবন
সমস্ত পথ জুড়ে।
কেউ বা পেল রাজার চিঠি
কেউ গেল ভিন দেশ,
বদলে গেল চলার ধরন
বদলে গেল বেশ।
স্মৃতিরা সব সঙ্গে ছিল
হীরের চেয়েও দামী,
আমার জন্য মেঘবালিকা
দাঁড়িয়ে ছিলে তুমি।
কর্মজীবন, ব্যস্তজীবন
শুধুই খুড়োর কল,
বদলে যাওয়া সময় চেনে
ছেলেমেয়ের দল।
বর্ষ আসে, বর্ষ যায়
জমতে থাকে মায়া,
দীঘির কাছে গল্প করে
ক্লকটাওয়ারের ছায়া।
ক্লকটাওয়ারের মাথায় তখন
চাঁদের বুড়ী ঘুমোয়,
আমিও সেই গল্পে থাকি
থাকে আমার সময়।
ডিসেম্বর, ২০১৮
Image Credit : “File:Bidisha Lake – Bengal Engineering and Science University – Sibpur – Howrah 2013-06-06 8579.JPG” by Biswarup Ganguly is licensed under CC BY 3.0






Comments