top of page

ইশকুল-বাড়ি

  • Writer: Subhadeep Ghoshal
    Subhadeep Ghoshal
  • Jan 31, 1997
  • 2 min read

Updated: Nov 5, 2022


ree

একটা মেয়ে অনেক সকাল পেরিয়ে এলো।


ছোট্টবেলায় খরগোশটা হারিয়ে গেলে

যে বনটায় খুঁজতে যেতো,

সেই বনটার গাছ কেটে সব ঘর বানালো,

একটা মেয়ে অনেক সকাল পেরিয়ে এলো।


রাজার বাড়ি, বৃদ্ধ বাড়ি

ঘিরে ছিল ঝোপজঙ্গল, গাছগাছালি

ইঁট পাথরে অনেক গল্প লুকিয়ে ছিল।

সেই বাড়িটা ভেঙে খেলার মাঠ বানালো,

একটা মেয়ে অনেক সকাল পেরিয়ে এলো।


যে রাস্তায় অনেক খেলা, কলেজবেলা,

স্লোগান, মিছিল, সাম্যবাদের স্বপনদোলা,

সেই রাস্তার এপাশ ওপাশ বদলে গেলো -

একটা মেয়ে অনেক সকাল পেরিয়ে এলো।


ছোট্ট ঘরে গুতিকতক মেয়ের পড়া,

এই ইশকুল তখন থেকেই আঁচল ধরা,

দেখতে, দেখতে স্কুলের বাড়ি, মাঠও হলো -

একটা মেয়ে অনেক সকাল পেরিয়ে এলো।


সময় বড় আজব জিনিষ,

কখনো দেখি কাটতেই চায় না,

সেকেন্ডগুলোকে লাগে মিনিট

মিনিটগুলোকে ঘন্টা,

আবার রবিবার রাতগুলোয়

শুতে যাবার আগে,

এত খারাপ লাগে,

মনে হয়,

বড্ড তাড়াতাড়ি যায় রবিবার দিনটা।


এইতো সেদিন পূর্ণিমা 

টিচার্স রুমের দেওয়াল ঘেঁসে দাঁড়িয়েছিল

কাঁচুমাচু মুখে,

অপরাধ ক্ষমাযোগ্য নয়।

সদ্য গোঁফ ওঠা কোনো কিশোরের 

হৃদয়মথিত চিঠি 

ঘটিয়েছে প্রলয়।

আজ দেখো তারই মেয়ে পরীক্ষা হলে

জানলার দিকে চেয়ে কলম চেবায়,


ধন্যি সময়!


কতদিন, কতমুখ রাস্তা গলিতে

হাসিমুখে বলেছে

দিদি চিনতে পারছেন?

এলোমেলো উলটিয়েছি স্মৃতির পাতা

সোমা বুঝি তুই

অনেক বকেও ছাড়াতে পারিনি তোর নখ খাওয়া অভ্যেস,

আসমা বুঝি তুই

বাড়িতে প্রথম স্বাক্ষর, অথচ একদিনও পড়া ভুল করিসনি

লাবনী বুঝি তুই

তোর দেওয়া গ্রীটিংস কার্ড গুলো এখনও সব আমার কাছে আছে।

কুমকুম বুঝি তুই 

ডাকঘরে অমলের মরে যাওয়া দেখে অঝোরে কেঁদে ছিলি।

অনিমা বুঝি তুই 

তিন বাড়ি বাসন মেজে পড়তে আসতিস।

কোয়েল বুঝি তুই

শিউলি বুঝি তুই

নমিতা বুঝি তুই

জাহানারা, অপর্ণা, কাকলি, ঝর্ণা

সব ছবি মিলে মিশে এক হয়ে যায় -


দূর ছাই এতো নাম, এতো মুখ

সব কিছু ঠিক ঠাক মনে রাখা যায় ?


সময় যখন চলতে থাকে, 

স্মৃতির পাতা ভরতে থাকে

অনেক কিছুই সাজায় এলোমেলো।

নতুন আসে, পুরোনো যায়

মুখের ওপর মুখ জমে যায়

এই এভাবেই অ্যাদ্দিন চলছিল।


সওয়া দশটা বাজলেই প্যাঁক প্যাঁক হর্ন

নাকে মুখে দু একটা গুঁজেই

রিক্সায় সওয়ার,

ভুল করে চিরুনি মাথায় নিয়েই

চলে এসেছি অনেকবার,

ভুল করা আমার স্বভাব।

তোমরা সব ভাল মতো জানোই

নাজেহালও হয়ে গেছো ভুল ধরে ধরে।


কিন্তু দেখো, 

আর ভুল করেও কোন টিচার্স ডে তে

মাইকের সামনে দাঁড়াবো না।

আর ভুল করেও

অ্যানুয়াল ফাংশান এলে

নতুন নাটকের রিহার্সালে মেতে উঠবো না।

আর ভুল করেও 

সরস্বতী পুজোর আগে 

ইশকুল সাজিয়ে দেরী করে বাড়ি ফিরব না।

আর ভুল করেও 

হেঁটে যাবো না কোনও প্রভাত ফেরীতে।

আর ভুল করেও 

ভুল ধরা পড়ে গেলে হাসব না।

আর ভুল করেও

আমি আসবো না

দিদিমনি হয়ে এই ইশকুলে।


রোজ রোজ গলা ফাটিয়ে

চেঁচিয়ে যাওয়া,

গরম হাওয়া, ঠান্ডা হাওয়া

রাগ, দুঃখ, ভালবাসা,

মেয়েগুলোর যাওয়া আসা,

সব পরীক্ষা, সব অশান্তি

মার্কসিট, কাটাকুটি, যোগবিয়োগ, ভুলভ্রান্তি

হিসেব নিকেশ

সমস্ত শেষ।


যেভাবে পরীক্ষা শেষে 

পুরোনো বই রিটায়ার করে

নতুন ক্লাসের নতুন বই আসে নতুন মলাটে,

যেভাবে পুরোনো যুগ রিটায়ার করে

যেভাবে পুরোনো গানওয়ালা রিটায়ার করে

যেভাবে পুরোনো দুধওয়ালা রিটায়ার করে

যেভাবে পুরোনো কাজের লোক রিটায়ার করে

যেভাবে পুরোনো দিদিমনি রিটায়ার করে -

সেভাবে আমিও।


সুখ, দুঃখ

হাসি, কান্না

ঝগড়া, ভালোবাসা ভরা

অনেক বছরের ইতিহাস,

এ ইশকুলের ইতিহাস

আমার ঝুলিতে,

বলতে নেই, হয়েছে বেশ ভারী।

এবার সময়,

যাবার সময়,

গেটটা ঠেলব

পা ফেলব

ফিসফিস করে বলব -

ও ইশকুল 

এবার তবে হাতটা ছাড়ি ?


আমার ইতিহাস বুকে করে নিয়ে 

দাঁড়িয়ে থাকবে ইশকুল বাড়ি।


জানুয়ারী ১৯৯৭ 


মায়ের  ছোটবেলা ও কর্মজীবনের স্মৃতি অবলম্বনে রচিত

image credit – Iamakashnathsarkar, CC BY-SA 4.0, via Wikimedia Commons

Comments


Anchor 1
bottom of page